
জন্মশতবর্ষে মৃণাল সেন
পিনাকী চৌধুরী : তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালনার জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং কিংবদন্তি। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেনের ছবিতে বারেবারে উঠে এসেছিল সমাজের নীপিড়িত , আর্ত মানুষদের কথা । মূলত নিম্নবিত্তের মানুষদের অনেক হতাশা, আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর পরিচালিত বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতিবাদের জোরালো ভাষা ! ১৯২৩ সালের ২৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশিষ্ট পরিচালক মৃণাল সেন। সেখানে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের পরে কলকাতায় চলে এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। আর তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তাঁর পরিচালিত ২৮ টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতে যেন সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবন যাপনের কথাগুলো প্রাধান্য পেয়েছে । জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্য হয়েছে তাঁর পরিচালিত ‘ বাইশে শ্রাবণ ‘ এবং ‘ ভুবন সোম’ ছবিগুলো। আসলে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন সমাজবাদী সংস্থা ইন্ডিয়ান পিপলস্ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং সমমনস্ক মানুষদের কাছাকাছি চলে আসেন । শুধু কি তাই ? প্রথম জীবনে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মৃণাল সেন চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ করেছিলেন। আদ্যন্ত ভদ্র এই মানুষটি ১৯৫৫ সালে ‘ রাত ভোর ‘ ছবির মাধ্যমে পরিচালনার কাজ শুরু করেন।তার পরের ছবি ‘ নীল আকাশের নিচে ‘ দর্শকমহলে সমাদৃত হয়। আর ১৯৮০ সালে তাঁর পরিচালিত ‘ আকালের সন্ধানে ‘ সিনেমাটি যেন আপামর চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষদের বাকরূদ্ধ করে। বলা ভাল, তামাম দুনিয়াকে নাড়িয়ে দেয় ! ছবিটির প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ১৯৮১ সালে তিনি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের মতো অনন্য সম্মান তিনি লাভ করেছিলেন। বাস্তবে মৃণাল সেন শুধুমাত্র একটি নাম নয় , বলা যায়, চলচ্চিত্র জগতের ব্র্যান্ড নেম !
