
ঘুরে আসি ঝরনা লেকের যুগলবন্দী
অজয় মুখোপাধ্যায় : প্রকৃতি একটু একটু করে বদলাচ্ছে। হেমন্ত এখন দোরগোড়ায়, তার হাত ধরেই এসে পড়বে শীত। এটাই তো বেড়াবার সময়। এই সময়েই পায়ের তলার সরষেগুলো নড়েচড়ে ওঠে। উড়ুউড়ু মনটাকে বেঁধে রাখা দায়। হাতে বেশি সময় নেই? মাত্র দিন দুয়েক? কুছ পরোয়া নেই। এক রাত, দু’দিনের ট্যুরে ঘুরে নিন ঝরনা, লেক আর সবুজের ত্রিবেণী সঙ্গম। কিন্তু কোথায়? এই তো! ঘরের কাছেই রয়েছে তোপচাঁচি লেক, ভাতিন্ডা আর উশ্রি ঝরনা।

ধানবাদগামী সকালের যে কোনও ট্রেনে উঠে বসুন। সাড়ে চার ঘন্টায় পৌঁছে যান ধানবাদ। স্টেশনের কাছাকাছি কোনও হোটেলে এক রাতের অতিথি হয়ে উঠুন। স্নানাহার সেরে একটু গড়িয়ে নিয়ে সাড়ে তিনটে নাগাদ বেরিয়ে পড়ুন। গাড়ি আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন। শহর থেকে ৪৫ কিমি দূরের ভাতিন্ডা ফলস বেরিয়ে নিন। শহর পেরলেই সবুজের আমন্ত্রণ। দেহাতি গ্রাম্য পথ ধরে সোজা ঝরনার কোলে। পাহাড়ের বুক চিরে, পাথরের গায়ে হিল্লোল তুলে নেমে আসছে দুরন্ত ঝরনা। মন ভালো করা সূর্যাস্ত দেখে ফিরে আসুন।পরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমে তোপচাঁচি লেক। শহর থেকে ৫০ কিমি দূরে। পৌঁছতে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। সবুজের আঁচলে বাঁধা তোপচাঁচি লেক। ঝরিয়া জলবিদ্যুৎ সংস্থা তৈরি করেছে এক বিশাল বাঁধ। দূরে, লেকের জলে ছায়া ফেলেছে পরেশনাথ পাহাড়। বাঁধের উপর দিয়ে, এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত হাঁটতে বেশ লাগবে। সারাক্ষণ খেলে চলেছে মনোরম বাতাস। মন ভালো করে দেওয়া নির্জন প্রকৃতি আপনার এনার্জিকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে।লেকের একটু দূরেই মহানায়ক উত্তমকুমারের বাড়ি, দেখতে ভুলবেন না। এই তোপচাঁচি লেকে মহানায়ক অভিনীত বেশকিছু ছবির শুটিং হয়েছিল, যার মধ্যে ‘শুধু একটি বছর’, ‘শঙ্খবেলা’ উল্লেখযোগ্য। জায়গাটির প্রেমে পড়ে এখানেই একটি বাড়ি তৈরি করেন। মাঝে মাঝেই চলে আসতেন এই নির্জন প্রকৃতির কোলে। বর্তমানে মালিকানা হস্তান্তরিত হয়েছে।

এবার আরও এক ঝরনা, উশ্রি। সেই কোন ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের ‘সহজ পাঠ’এর হাত ধরে প্রতিটি বাঙালি উশ্রি নদীর ঝরনা’কে দেখে ফেলে, মানসচক্ষে। পাথুরে পাহাড় টপকে ঝরনা সগর্জনে নেমে এসে মিশেছে উশ্রি নদীতে। পাথরে ছিটকে পড়ে সৃষ্টি করছে সূক্ষ্ম জলকনা, যা হাওয়ায় উড়ে এসে গালে, মুখে ঠাণ্ডা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। অফুরন্ত প্রকৃতির মাঝে সময় কোথা দিয়ে চলে যায় খেয়ালই থাকবে না। ওদিকে ফেরার তাড়াও আছে। বিকেলের ট্রেন যে ধরতে হবে! অগত্যা। ফিরে চল ঘরের টানে, কেজো জীবনে।

জেনে নিন – ধানবাদ যাবার জন্য রয়েছে ব্ল্যাক ডায়মণ্ড, হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী, লালকুয়া, পূর্বা বা এসি ডাবলডেকার। ফেরার সময় বিকেলের কোলফিল্ড বা শতাব্দী ধরে ফিরে আসুন। ধানবাদ স্টেশনের আশেপাশে, বিভিন্ন মানের এবং দামের প্রচুর হোটেল আছে। স্টেশন চত্বর থেকেই সাইট সিয়িং করার গাড়ি বুক করে নিন। এখানে দরদাম চলে।
