করালবদনা দেবী কালী

করালবদনা দেবী কালী

পিনাকী চৌধুরী : কার্তিক মাসের অমাবস্যার মহানিশায় দেবী কালী পূজিতা হন। তাই আধ্যাত্মিকতার টানে কালীপুজোয় বহু মানুষ নির্জলা উপবাস করেন। কালী মূলত শাক্ত পরিবারের আরাধ্য  দেবী হিসেবেই পরিচিত। তবে আজকের এই কালী মূর্তি খুব একটা প্রাচীন নয় । বরং তার থেকেও বহু প্রাচীন তন্ত্র সাধনা।

কথিত আছে, ষোড়শ শতকের তন্ত্র সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম কালীর রূপ কল্পনা করেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, তার আগে কিন্তু দেবী ‘ যন্ত্রে ‘ পূজিতা হতেন। যন্ত্র আসলে বিভিন্ন শক্তির প্রতীকী রূপ।  যদিও কেউ কেউ আবার এটাও বলেন, কৃষ্ণানন্দের আগে গুহ্য মূর্তি বা অন্য কল্পে দেবী পূজিতা হতেন। বর্তমানে দেবী কৃষ্ণবর্ণা ।‌ ‘ ঋগ্বেদ ‘ অনুসারে সৃষ্টির আগে সবকিছু ঘোর তমসাচ্ছন্ন ছিল। সেই সর্বগ্রাসী তমসার প্রতীক রূপে দেবী কৃষ্ণবর্ণা ! বাস্তবে দেবীর গাত্রবর্ণ থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই লুকিয়ে আছে প্রতীকী তাৎপর্য । এখানে দেবী কিন্তু দিগম্বরী। তিনি আবার মুক্তকেশীও বটে ।দেবী দুর্গার অপর এক রূপ কালী । তাই তিনি মায়াতীত, অর্থাৎ সব জীবকে তিনি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেন। তাঁর সেই মুক্তকেশ যেন সেই মায়াপাশের প্রতীক। দেবীর ললাটে অর্ধচন্দ্র শোভা পাচ্ছে। ‘ মহানির্বাণতন্ত্র ‘ অনুসারে তা নির্বাণ ও মোক্ষ লাভের প্রতীক। দেবী ত্রিনয়না, এই তিনটি নয়ন আসলে সূর্য, চন্দ্র ও অগ্নির প্রতীক। দেবী আবার মুন্ডমালিনী , তাঁর গলায় পঞ্চাশটি নৃমুন্ড বস্তুতঃ বর্ণমালার পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক।  কালী করালবদনা! তিনি সমস্ত বিশ্বকে যেন গ্রাস করেন।দেবী কালী চতুর্ভুজা । মনে করা হয়, তাঁর হস্তের খড়গ দ্বারা তিনি সাধকের মোহপাশ ছিন্ন করেন।  মুক্তকেশী দেবী কালীর পদতলে শায়িত শিব কিন্তু শক্তিরহিত, তিনি নিষ্ক্রিয়। এখানে দেবী কালীই ক্রিয়াশীল। দেবী আবার শৃগাল পরিবৃতা। তিনি যেহেতু শ্মশানচারিণী।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )