মিনি গঙ্গাসাগর
পিনাকী চৌধুরী : গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির পুণ্য স্নানের অব্যবহিত আগেই বাবুঘাটে সাধুসন্তদের অস্থায়ী ডেরায় হাজির হয়েছিলাম। আক্ষরিক অর্থেই যেন এক টুকরো মিনি গঙ্গাসাগর ! বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত সাধুদের সমাবেশে যেন জমজমাট বাবুঘাট চত্বর। কমবেশি এক হাজার সাধু সন্ন্যাসী এই ‘২৪ সালে ইতিমধ্যেই বাবুঘাটের তাঁদের অস্থায়ী ডেরায় থাকছেন। এরপর তাঁদের গন্তব্য গঙ্গাসাগর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেশ সুন্দর ভাবে বাবুঘাটে মেলা চত্বর সাজিয়ে তুলেছেন। পর্যাপ্ত জল , আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল নাগা সন্ন্যাসীদের। হাত তুলে আগত দর্শনার্থীদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন। সামনে জ্বলে চলেছে ধুনি । গিয়ে বললাম ” আপনি কোথা থেকে আসছেন ? নাম কি ?” হিন্দিতে তিনি জানান ” আমার নাম পঞ্চম গিরি নাগা। কাশী থেকে এসেছি । “। বললাম ” আপনি কেন নাগা সন্ন্যাসী হলেন ?” বাবাজী জানালেন ” সংসারের মুখে থুতু ছিটিয়ে আমরা নাগা সন্ন্যাসী হয়েছি। কি আছে এই জগত সংসারে ? নাগা সন্ন্যাসীদের , মানে আমাদের জীবন যাপন বিবস্ত্র হয়ে নিষ্কাম ভাবে পালন করতে হয়। ” এই বলেই তিনি গঞ্জিকায় সুখটান দিতে লাগলেন ! মনে মনে ভাবলাম, কি বিচিত্র এই নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন ! সামনে রাখা পাত্রে অনেকেই দশ – বিশ টাকা প্রণামী দিচ্ছেন। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চাইছেন সন্ন্যাসীদের কাছে ! আরও একটু এগোতেই চোখে পড়ল শনি মহারাজকে । ভাব জমালাম তাঁর সঙ্গে। প্রশ্ন করলাম ” আপনার এইরকম নামের কারণ কি ?” সহাস্যে শনি মহারাজ বললেন ” আমি দীক্ষা দিই না। বরং ভক্তদের শিক্ষা দেই ! তাই এই নাম ! ” বুঝলাম, সুকৌশলে তিনি আমাকে সত্যের পথে থাকতে বলছেন। সত্তরোর্ধ্ব এই শনি মহারাজের আশ্রম রয়েছে ইছাপুরে ।
কথায় কথায় তিনি বলেছিলেন যে , প্রতি বছর ভাদ্র মাসে কৌশিকী অমাবস্যায় তিনি তারাপীঠে যান। লক্ষ্য করলাম যে মহারাজের হাতের প্রতিটি আঙুলে অজস্র রত্ন পাথর শোভা পাচ্ছে। এছাড়াও তিনি গলায় পরিধান করেছেন বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মুদ্রা ।প্রশ্ন করলাম, কেন ? তিনি বলেন ” এইসব ভক্তদের দান। ” কথায় কথায় প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম মহারাজ কে “এখন বাবুঘাটে মেলার পরিবেশ কেমন ?” শনি মহারাজ বললেন ” গত তিরিশ বছর ধরেই আমি এখানে আসি। তবে এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো এখানে পর্যাপ্ত জল আলোর ব্যবস্থা করেছেন। চিকিৎসাও সাধুরা এখানে পাচ্ছেন। সাধুরা এখানে শান্তিতেই রয়েছেন।” সূর্যাস্তের ম্লান আলো তখন মেলা প্রাঙ্গণে জাফরি কাটছে! তখনও দেখলাম, অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন মেলায়। হয়তো সাধুদের আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। হয়তোবা নিজের ভবিষ্যৎ জানবার জন্য। মনে মনে ভাবলাম, মাঝেমধ্যে সাধুসঙ্গ করা ভাল।