
শিল্পের আঙ্গিকে দেবী দুর্গা
পিনাকী চৌধুরী : মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা তিনি। কখনও তিনি বরাভয়দাত্রী, কখনও বা আবার রণচন্ডী , তো আবার কখনও স্নেহময়ী মা! একমেটে, দোমেটে , তারপর শিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে দেবী দুর্গা পূর্ণ রূপে বিকশিত হন । প্রাচীন বাংলায় দেবী দুর্গার দুটি ধারার রূপ স্পষ্ট এবং জনপ্রিয়। একটি হল বিষ্ণুপুর ঘরানা এবং অপরটি হচ্ছে কংসনারায়ণ ঘরানা । আসলে বহু আগে কিন্তু দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করা হত পাথর দিয়ে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাজা জগৎমল্ল এবং রাজশাহীর রাজা কংসনারায়ণ প্রথম উদ্যোগ নিয়ে মাটির দেবী প্রতিমা নির্মাণ করেন।

সময়টা ৯৯৭ সাল । রাজা জগৎমল্লের নির্দেশেই বিষ্ণুপুরে প্রথম মৃন্ময়ী দেবী দুর্গা প্রতিমা নির্মিত হয়। বাঁকুড়ার বিভিন্ন স্থানে এই রীতিতে দেবী প্রতিমা দেখা যায় এখনও। কিন্তু বিশেষত্ব কি ? একচালের মধ্যে ওপরের দিকে অধিস্ঠিত রয়েছেন গণেশ এবং কার্তিক। আর নিচের দিকে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। ইতিহাস বলছে, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বাংলায় একবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন। তদানীন্তন সময়ে সেই পুজোয় সাত – আট লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। আর সেই সেই কংসনারায়ণ রীতির দুর্গা প্রতিমা ছিল বিষ্ণুপুর রীতির উল্টো অবস্থান। অর্থাৎ গণেশ ও কার্তিক নিচের দিকে এবং লক্ষ্মী ও সরস্বতী রয়েছেন ওপরের দিকে। আরও লক্ষণীয়, এই রীতিতে প্রতিমার পিছনে থাকা অর্ধচন্দ্রাকার চালচিত্রের মধ্যে দশমহাবিদ্যা অঙ্কিত থাকে, যা কিনা সকলের নজর কাড়ে ! তবে শুধুমাত্র দুর্গা প্রতিমা নয় , বরং চালচিত্রের কারুকার্যও বিভিন্ন ধরনের। সাবেকি প্রতিমার পিছনে দেবী প্রতিমার পিছনে টানা চাল, বাংলা চাল এবং মঠচৌড়ি চাল লক্ষ্য করা যায়। প্রতিমার পিছনে তিনটি চাল যদি ওপরের দিকে উঠে যায় চূড়ার মতো, তাহলে তাকে বলা হয় মঠচৌড়ি চাল।
