
শারোদৎসব এবং অর্থনীতির লক্ষীলাভ

পিনাকী চৌধুরী : সত্যিই শরৎ ঋতু তুলনারহিত ! ভোরের নরম আলোয় যখন একরত্তি শিশুটি শিউলি ফুল কুড়োয়, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে যখন আন্দোলিত কাশফুল আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, তখনই যেন মনে হয় , সময় এলো কাছে ! পুজোর ক’দিন বাঙালির কাছে শুধুই ছুটি নয় , বলা ভাল মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দর্শনের জন্য ছোটাছুটি ! আর হবে নাই বা কেন ? এ যে বাঙালির প্রাণের উৎসব । দুর্গোৎসব কি শুধুই নিছক উৎসব, অথবা আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ পুজো ? না, এর বাইরেও শারোদৎসবের একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। গতবছর আইআইটি খড়গপুরের গবেষকদের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছিল পুজোকে কেন্দ্র করে সারা রাজ্যে কমবেশি ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে! কি বলবেন একে ? অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য ! হ্যাঁ, পুজোকে কেন্দ্র করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাময়িক হলেও কর্ম সংস্থানের সুযোগ ঘটে। যিনি মৃৎশিল্পী, যিনি মন্ডপ নির্মাণ করেন, যিনি থিমশিল্পী, যিনি আলোকসজ্জা সম্পাদন করেন, যিনি ফুলমালা বিক্রি করেন, যিনি পুজোর ক’দিন শহরের রাজপথে খাবারের দোকানের স্টল দেন,যিনি বস্ত্র বিপণীর কর্ণধার, এঁরাও কিন্তু আর্থিক দিক থেকে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ হন । এছাড়াও শারোদৎসবকে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্থিক সাবলম্বী হবার পথ। আসলে পুজোকে কেন্দ্র করে আপামর বাঙালির উদ্দীপনার অন্ত নেই। তবে শুধুমাত্র ভিন রাজ্য থেকেই নয়, বিদেশী পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে কলকাতার দুর্গোৎসব ! তাই বোধহয় পর্যটন মানচিত্রে কলকাতার শারোদৎসব ক্রমে ক্রমে বেশ ভালো জায়গা করে নিয়েছে । তাই তো কাশফুলের সাদর আমন্ত্রণে আবারও বাঙালি উৎসবমুখর হতে প্রস্তুত হচ্ছেন। মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দর্শনের লাইনটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে ! অপেক্ষার প্রহর গুনছে আম বাঙালি। আর তার সঙ্গে এই ২০২৩ সালেও অর্থনীতির লক্ষীলাভ অবশ্যই ঘটবে ।তার সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে কার্নিভাল।
