
ঢাকী এবং বাংলার সৌহার্দ্য

পিনাকী চৌধুরী : বাংলার ঢাক একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, যা কিনা প্রতিটি শুভ অনুষ্ঠানে এবং পুজোপার্বণে বাধ্যতামূলক। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বাংলার সৌহার্দ্য এমন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যারা কিনা বাংলার ঢাকিদের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। ২০০৪ সালে পথ চলা শুরু হয় বাংলার সৌহার্দ্য এর । বর্তমানে সেখানে নিবন্ধীকৃত ঢাকীদের সংখ্যা তিরিশ হাজার।

শহর ও গ্রামের বিভিন্ন পুজো কমিটি এই বাংলার সৌহার্দ্যের মাধ্যমে পুজো মন্ডপে ঢাকীদের বায়না করে আনেন। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় , বরং দিল্লি, মুম্বাই, আসাম থেকেও ডাক আসে। বাংলার সৌহার্দ্যের তরফে সঞ্জীব সরকার এই প্রতিবেদককে জানালেন ” যদিও এখন ঢাকীদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সারা বছরে হয়তোবা ঢাক বাজিয়ে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা আয় হয় । তাই ঢাকীরা অনেকেই অন্যান্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।” আসলে পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে আদিম যুগে এই বাদ্যযন্ত্রের প্রথম আবির্ভাব ঘটে। তদানীন্তন সময়ে নাম ছিল ‘ দামামা ‘! যা আদিম মানুষেরা হিংস্র জন্তু জানোয়ারের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং অপরকে হুঁশিয়ার করতে বাজাতো । সময় থেমে থাকেনি। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল । পৌরাণিক মতে ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারকালে এবং রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের জন্য অকাল বোধন পুজোর আয়োজন করেছিলেন। আর সেই বার্তা দেবকূলে পৌঁছে দিয়ে দেবাতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এই বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে। বাংলার সৌহার্দ্য ঢাকীদের পরিবারের কোনো সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং তাঁদের সন্তান সন্ততিদের স্কুলে ভর্তি করবার ব্যবস্থাও করে। এছাড়াও পুজোর সময় দরিদ্র ঢাকী পরিবারের সদস্যদের জন্য উপহার সামগ্রী বিতরণ করে। পাশাপাশি বাংলার সৌহার্দ্যের অনুরোধ , কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার এবার অন্তত উদ্যোগ নিয়ে ঢাকীদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। যদিও এখন ঢাক হল ‘মরশুমি বাদ্য ‘ , কিন্তু বাংলার পুজো পার্বণে ঢাকের বাদ্যির গুরুত্ব অপরিসীম।

